ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আপনাকে ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ইসলাম হচ্ছে একটি শান্তিময় ধর্ম (অন্য কোন ধর্মকে এখানে তুচ্ছ করা হয়নি)। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অনেকের অনেক জ্ঞান রয়েছে। আমরা এখানে ইসলামের একটি ছোট আরবি কিতাব এর অনুবাদ করতে চলেছি। যারা ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা এই পেজটি থেকে আরবি অনুবাদ করা ইসলামের ইতিহাসের গল্প সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমরা যে গ্রন্থটি অনুবাদ করতে চলেছি সেই মূল গ্রন্থের আরবি লেখক এর নাম হচ্ছে আলি তান্ত্বাবী। ইতিহাসের গল্প এই গ্রন্থটিতে সর্বমোট সাতটি ইতিহাসের গল্প রয়েছে। তাই অনুবাদক গ্রন্থের নাম দিয়েছেন ইতিহাস গল্প। অনুবাদ করেছেনঃ মাওলানা মোহাম্মদ ছফির উদ্দিন। আমরা এই পেজটিতে ইতিহাসের গল্প অনুবাদ গ্রন্থের দ্বিতীয় ইতিহাসের গল্পঃ অপরাধী ও পুলিশ সুপার। এই গল্পটি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল গল্প এখানে প্রকাশিত করা হবে। ইতিহাসের গল্প গুলো পড়ার মাধ্যমে আপনার মাঝে ঈমানের পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি। তাই কথা না বাড়িয়ে আমরা ইতিহাসের গল্পতে চলে যায়। আশা করছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ইতিহাসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কোন কাল্পনিক বিষয় সম্পর্কে বলা হয়নি।
এক নজরে | ইতিহাসের গল্প |
---|---|
গ্রন্থের নাম | ইতিহাসের গল্প |
মোট গল্প | ০৭ টি |
গল্প নাম্বার | দ্বিতীয় |
গল্পের নাম | অপরাধী ও পুলিশ সুপার। |
মূল গ্রন্থের লেখক | আলি তান্ত্বাবী (আরবী) |
অনুবাদক | মাওলানা মোহাম্মদ ছফির উদ্দিন |
প্রকাশনায় | www.othobajobs.com |
অপরাধী ও পুলিশ সুপার
বাদশা হারুনুর রশিদের পুত্র মামুনুর রশিদের পুলিশ সুপার আব্বাস বর্ণনা করেনঃ বাদশা মামুন এক রাতে আমাকে ডেকে পাঠালেন। হঠাৎ দেখলাম তাঁর সামনে বেড়ী ও শিকল দিয়ে বাঁধা এক লোক! অতঃপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, -হে আব্বাস! আমি বললামঃ আমি উপস্থিত হে আমিরুল মূ’মিনীন!
তিনি বললেনঃ এই লোকটিকে তোমার নিকট নিয়ে যাও এবং হেফাজতে রাখ। শোন! তুমি নিজেই তার দেখা-শুনা করবে এবং আগামী কাল খুব সকালে আমার নিকট হাজির করবে। তবে খুব সাবধান! কোন অবস্থাতেই যেন পালিয়ে না যায়। তাহলে তোমাকেই তার পরিবর্তে পাকড়াও করবো।
অতঃপর আমি একদল পুলিশকে ডাকলাম তাকে বহন করে নেওয়ার জন্য। কারণ তার নিজের নড়া-চড়া করার ক্ষমতা ছিল না। আমি নিজেও তার সাথে বের হলাম আর মনে মনে ভাবলাম খলিফার এমন নির্দেশের পরও যদি তাকে কারাগারে পাঠাই তাহলে তো আমি নিরাপদ নহে! হয়তো বা সে পালিয়ে যাবে, তখন আমাকেই তার পরিবর্তে গ্রেফতার করা হবে। সুতরাং আমার কর্তব্য হবে সে আমার সাথে আমার ঘড়েই থাকুক এবং আমি নিজেই তার দেখা-শুনা করি। এরপর আমার ঘড়ে অবস্থান কালে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তার মধ্যে এক মহৎ ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব লক্ষ্য করলাম। আরো লক্ষ্য করলাম তার মধ্যে রয়েছে এক মহান নেতার নিদর্শন। কোন পাপিস্ট অপরাধরীর আলামত তার মধ্যে নেই। তাকে লক্ষ্য করে বললামঃ হায় আফসোস! তুমি কে?
তখন সে দীর্ঘক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ফলে আমার ধারণা হল হয়তো বা সে আমাকে চিনে! তখন সে বললঃ দামেস্কের এক লোক।
পুলিশ সুপারের দামেস্কের স্মরণ
দামেস্কের কথা বলা মাত্র আমার অন্তরে নাড়া দিয়ে উঠল সেই স্মরণীয় ঘটনা যা আমার কাছে ছিল খুবই প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ।
বললামঃ আল্লাহ দামেস্কে কল্যাণ দান করুন। নিঃসন্দেহে আমার প্রতি দামেস্কের এমন এক অনুগ্রহ রয়েছে যা আমার গর্দানকে ঘিড়ে রেখেছে। দামেস্কে এক লোক ছিল যে আমার প্রতি এতটাই এহ্সান করেছিল যা জীবনে কোনদিন ভুলতে পারব না। এবং সব সময় আমি আমার পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের কাছে তার আলোচনা করে থাকি। ফলে তার নাম আমার পরিবারবর্গ ও বন্ধুদের মুখে মুখে। যখনই দামেস্ক হতে কোন আগন্তুক আগমন করে তাকেই তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করি।
এবার লোকটি বললঃ কে সেই লোক? আমি বললামঃ ওমুক, তুমি কি তাকে চিন? লোকটি বললঃ হ্যাঁ, তাকে চিনি তবে আপনার প্রতি তার অনুগ্রহের সেই ঘটনাটি না শুনা পর্যন্ত আমি তার সম্পর্কে কিছুই বলব না।
দামেস্কের বিপ্লব
তখন আমি বললামঃ আমি দামেস্কের গভর্ণরের কেরাণী ছিলাম। দামেস্ক বড়ই আজব শহর! এ দেশ তার অধিবাসীদের জন্য অতি নমনীয় ও সহনশীল যদি অনুকুল পরিবেশ বিরাজ করে। কিন্তু যদি বিক্ষোভ আর বিপ্লব শুরু হয় তবে, তাদের জন্য সে দেশ হয়ে দাড়ায় অতি কঠোর। তুমি সেথায় নিরাপদে ও সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে সক্ষম। কেহ তোমাকে বিরক্ত করবে না।
তবে সেই আগ্নেয়গিড়ী (বিপ্লব) যা তোমার নিম্নদেশ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। অনুরূপ আমাদের সময় হঠাৎ একবার সেই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আমরা তাতে ভীত হইনি, কারণ আমরা ছিলাম রাজ প্রাসাদের ভিতরে। সন্ধায় আমরা নিরাপদে কর্মস্থল ত্যাগ করলাম। এদিকে বিক্ষোভের আগুন ব্যাপক আকার ধারণ করল এবং এর অকল্যাণ গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ল।
জনগণ প্রাসাদ ঘেড়াও করল। তারা গভর্ণর ও আমার মস্তক খন্ডন করতে ইচ্ছুক। ফলে গভর্ণর এক ঝুপড়িতে পলায়ন করল। আর আমি বারান্দা দিয়ে একটি রশি ঝুলিয়ে নেমে আসি। আমি প্রাসাদের পিছনে এক অন্ধকার গলিতে অবতরণ করলাম। এ সময় আমার প্রতি আল্লাহ্ সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটাই ছিল যে, সঙ্গে আমার স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তবে পলায়ণ করার সময় আমার শরীরে ছিল সাধারণ পোষাক। তাই আমি জনমানব শুণ্য সরু রাস্তা দিয়ে চলতে থাকি। রাতটিও ছিল অন্ধকার। আবার বিক্ষোভকারীদের আওয়াজ আমার কানে পৌঁছতে থাকে। ফলে আমি কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করা
অবশেষে একটি বড় বাড়ি দেখতে পেলাম এবং তার গেটে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত পেলাম যার মাঝে কল্যাণের নিদর্শন রয়েছে। তাকে বললামঃ আমি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থী, এবং আপনার। আপনার সাহায্যে আমি কি একটু উপকৃত হতে পারি?
লোকটি বললঃ সু-সংবাদ গ্রহণ কর। এরপর তিনি আমাকে এমনভাবে বাড়িতে নিয়ে গেলেন যেন কেউ দেখতে না পায়। এবং ছোট্ট এক সিঁড়ি বেয়ে এমনভাবে উপরে নিয়ে গেলেন যে একমাত্র তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কেহ আমার সম্পর্কে কিছুই টের পায়নি। তবে স্ত্রী থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রতি গ্রহণ করেন যেন আমার সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলে।
গৃহ তল্লাশি
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শোরগোল আরম্ভ হয়ে গেল। তারা চেঁচা-মেচি আর চিৎকার শুরু করতে থাকে এবং আমার সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। উত্তরে সে বলল, আমি কাউকে দেখিনি। তারা বলছে, আমরা অবশ্যই তোমার গৃহ তল্লাশি করবো।
তখন লোকটি বললঃ ঠিক আছে আপনাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্ধারণ করুন যে ঘর তল্লাশি করবে। তখন তারা একজনকে ঠিক করল এবং সে ঘরে ঢুকে ঘুরে ফিরে কাউকে পেল না। শেষ পর্যন্ত সেই কক্ষের কাছে পৌঁছে গেল যেখানে আমি ছিলাম। সাথে সাথে মহিলাটি দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখে চিৎকার আরম্ভ করে দেয় এবং তারা ফিরে যায়।
বাড়িওয়ালার স্ত্রী তাকে রক্ষা করে
সারাদিন আমি সেখানেই অবস্থান করি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। আর বাড়িওয়ালা যখনই বাড়ির লোকজনকে অন্যমনস্ক দেখতো তখনই আমার কাছে চলে আসতো। আমার জন্য খাবার সরবরাহ করতো এবং আমার সাথে সঙ্গ দিতো। এরপর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত তাকে দেখতে পাই না। এবং মহিলা নিজেই আমার জন্য খাবার বহন করে। খাবার নিয়ে সে সিঁড়ির মাঝ বরাবর এসে খাবার রেখে চলে যায়। কারণ কোন নারীর জন্য পর পুরুষের সাথে একাকি সাক্ষাৎ বৈধ নয়। তারপর আমি নিচে নেমে খাবার সংগ্রহ করি। এতে তার সাথে কোন রকম দেখা-সাক্ষাৎ হতো না।
লোকটির প্রত্যাবর্তন
কিছুদিন পর লোকটি ক্লান্ত ও অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এলো। এমতাবস্থায় তার মধ্যে দুঃখ-দুর্দশার আলামত দেখা যাচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে আপনার? জবাবে তিনি বললঃ সাইকেল (অতীতকালের চলাচলের যানবাহন) থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছি।
বিক্ষোভকারীরা তাকে প্রহার করে
পরবর্তীতে জানতে পারি লোকটি সাইকেল থেকে পড়ে ব্যাথা পায়নি। বরং বিক্ষোভকারীরা তাকে পাকড়াও করে আমার সন্ধান দেয়ার জন্য। কিন্তু উত্তরে সে বলেঃ কোথায় আছে তা আমি জানি না। তখন তারা তার উপর আক্রমণ করে, বেত্রাঘাত করে এবং এমনভাবে প্রহার করে যে রক্তাক্ত এবং নিষ্পেষিত করে ফেলে। এতদ্বসত্তেও সে আমার সন্ধান দেয়নি। তারপর যখন শাস্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলো, তখন সে বললঃ নির্দোষ একজন মানুষ যে কোন অন্যায় বা অপরাধ করেছে বলে আমার জানা নেই। এমন একটা লোকের সন্ধান তোমাদেরকে দিবো? তোমরা তাকে মেরে ফেলবে! আর সে এই রক্ত মাখা শরীর নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে?
আল্লাহর কসম সে যদি আমার পায়ের নিচেও থাকে তবুও তোমাদের কাছে তা প্রকাশ করবো না। কাজেই তোমাদের যা ইচ্ছা তাই কর। এই বিবাদের মিমাংসা স্বয়ং আল্লাহর দরবারে হবে। তারা ছিল মুসলমান। যখন তাদের কাছে আখেরাতের কথা উল্লেখ করল এবং আল্লাহর ভয় দেখালো, তারা ভয় পেয়ে গেল। এবং তাকে ছেড়ে চলে যায়।
বাগদাদে সফর
দীর্ঘ চার মাস পর্যন্ত আমি তার কাছে অবস্থান করি পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে ও শান্তিপূর্ণভাবে। অথচ সে জানে না আমি কে? এবং কোনদিন জিজ্ঞাসাও করেনি, আমার নাম কি? এদিকে বিদ্রোহীরা দেশে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। অবশেষে যখন আমার অনুসন্ধানের বিষয়টি নীরব হয়ে গেল। তাকে বললামঃ আমি বাগদাদে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বললেনঃ তিন দিন পর এক কাফেলা বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওনা হবে, তুমি বরং তাদের সাথেই যেও। এরপর তার আসওয়াদ নামক গোলামকে ডেকে বললেনঃ সফর সামগ্রী ও ঘোড়াটি প্রস্তুত কর।
মনে মনে ভাবলাম নিঃসন্দেহে লোকটি নিজের ধ্বংসের দিকে রওনা হতে যাচ্ছে। অথবা কোন কঠিন বিপদের সম্মুখিন হতে যাচ্ছে। বড় কষ্ট আর পেরেশানীর মধ্যে তাদের দিনগুলো অতিবাহিত হল। অতঃপর যখন কাফেলা রওনা হওয়ার দিন এল। খুব ভোরে লোকটি আমার কাছে উপস্থিত হল এবং বললঃ চল কাফেলা এক্ষুণি রওনা হয়ে যাবে। মনে মনে ভাবছি; কি করে রওনা হবো? আমার কাছে তো রাস্তায় চলার মত কোন পাথেয় নেই। নেই সাওয়ারী ভাড়া করার মত কোন টাকা-পয়সা। তথাপিও প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম।
হঠাৎ দেখছি সেই লোক ও তার স্ত্রী একটি ব্যাগ নিয়ে হাজির! ব্যাগটির মধ্যে রয়েছে সুন্দর জামা, নতুন একজোড়া মোজা এবং কিছু সফর সামগ্রী। সেই সাথে সঙ্গে এনেছেন একটি তরবারি। তরবারিটি আমার কাঁধে ঝুলিয়ে দিলেন। সাথে তার আসওয়াদ নামক গোলাম ও ঘোড়াটি হাদিয়া স্বরূপ প্রদান করলেন। এবং সঙ্গে দিলেন আরো একটি থলে, যার মধ্যে ছিল পাঁচ হাজার দেরহাম।
অবশেষে আমার হক্ব আদায়ে ত্রটি বিচ্যুতির জন্য তিনি নিজে এবং তার স্ত্রী ওজরখাহী করলেন। সেদিন আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলাম যে, তার এই উত্তম আচরণের উপযুক্ত প্রতিদান একদিন দিব এবং তার এই এহ্সানের যথাযথ বিনিময় প্রদান করবো।
এতো সেই ব্যক্তি
লোকটি বললঃ আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে সেই প্রতিশ্রতি পূরণের এবং উপযুক্ত বিনিময় প্রদানের সুবর্ণ সুযোগ দান করেছেন। আল্লাহর কসম, আমিই সেই ব্যক্তি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি জুলুমের শিকার, আমাকে মিথ্যা অপবাদের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী কাল আমাকে হত্যা করার জন্য উপস্থিত করা হবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ্কে ভয় কর এবং আমাকে রক্ষা কর। তখন তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। দেখতে পাচ্ছি এতো বাস্তবে সেই লোক!
কিন্তু বিপদ তাকে আমার থেকে আড়াল করার চেষ্টা করে এবং কিছু সময় আমাকে ভাবিয়ে তোলার উপক্রম হয় যে, তার ও আমার মাঝে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলাম না। তৎক্ষণাৎ তার উপরে ঝাপিয়ে পড়লাম, তার সাথে আলিঙ্গন করলাম এবং তার মাথায় চুমু খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? কি হয়েছে আপনার? কিসে আপনাকে এই পরিস্থিতিতে পৌঁছিয়েছে? যা দেখতে পাচ্ছি!
গ্রেফতারের কারণ
বললঃ তোমার সময়ে যেরূপ দাঙ্গা দেখাদিয়েছিল। অনুরূপ এক দাঙ্গা বিস্ফোরিত হয় দামেস্কে। কতিপয় শত্রু আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়ে আমাকে দোষারোপ করে। তখন আমিরুল মু‘মিনীন সৈন্য পাঠিয়ে শহর ঘিরে ফেলে। অতঃপর আমাকে গ্রেফতার করা হয়। এবং এমনভাবে প্রহার করা হয় যে, আমি মৃত্যুমুখে পতিত হই। তারপর আমাকে বন্দী করে আমিরুল মু‘মিনীনের দরবারে পাঠানো হয়।
অথচ পরিবার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এমনভাবে যে, আমি তাদেরকে কোন ওসিয়ত করতে পারি নাই এবং তাদের থেকে কোন রকম বিদায়ও নিতে পারি নাই। অবশ্য পরিবারের এক সদস্য আমার অনুসরণ করেছিল এই মর্মে যে, সে তাদের নিকট আমার সংবাদ পৌঁছাবে। বর্তমানে সে অমুকের নিকট অবস্থান করছে।
কাজেই তোমার থেকে শুধু এতটুকু প্রতিদান আশা করছি যে, তার কাছে এমন কাউকে পাঠাবে যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে তাকে সংবাদ দিবে। যেন তার মাধ্যমে আমি আমার কাঙ্খিত অসিয়তটুকু করতে পারি। যদি তুমি এই কাজটি করতে পার তবেই তুমি উপযুক্ত প্রতিদানের সীমানা অতিক্রম করলে এবং যথাযথভাবে তোমার প্রতিশ্রতি রক্ষা করলে।
দুই কর্তব্যের মাঝে
সুতরাং আমি সেই ব্যক্তির ন্যায় আনন্দ অনুভব করলাম যে তার মূল্যবান মনি-মুক্তা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর পূণরায় ফিরে পায়। পরিণত হলাম সেই ব্যক্তিতে যে কোন কিছু হারিয়ে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করার পর হঠাৎ সেটাকে তার সামনে দেখতে পায়।
এমতাবস্থায় তার মুক্তির জন্য মনে মনে দশটি পরিকল্পনা তৈরি করলাম। আবার ভাবছি সে একজন বন্দী এবং আমি নিজেই তার ব্যাপারে খলিফার কাছে দায়বদ্ধ। তখন নিজেকে সেই আশেকের মত মনে হল যে ঘুমের মধ্যে বন্ধুর সাক্ষাতের স্বপ্ন দেখে। অতঃপর জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল নিঃসঙ্গ একাকি বিছানায় পড়ে আছে।
আমি যেন কল্পনার জগত থেকে বাস্তবতার জগতে পতীত হলাম। আমার অবস্থান সম্পর্কে ভাবতে থাকি আর হৃদয়ের দংশনে দলিত মথিত হতে থাকি। যে ব্যক্তি আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করল অথচ আমি নিজেই আজ তাকে বন্দি করে রেখেছি এজন্য যে আগামীকাল তাকে মৃত্যুর হাতে তোলে দিবো! সে তার জীবনের বিনিময়ে আমাকে রক্ষা করেছে আমার হায়াত ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ আমি নিজেই তাকে পাহাড়া দিচ্ছি তার জীবন নাশের জন্য!
সুতরাং আমি এখন কি করবো? আমি কি তার প্রতিশ্রতি পূরণ করবো? তার ঋণ পরিশোধ করবো? তবে তো আমার দায়িত্ব পালনে খেয়ানতকারী হবো এবং খলিফার ক্রোধের মুখোমুখি হতে হবে। না-কি চাকরির আমানত রক্ষা করবো? এবং খলিফাকে সন্তুষ্ট করবো। আর মহাসম্মানের সাথে সন্তোষজনক জীবন উপভোগ করবো। যদি এমনটি করি, তাহলে তো নিজের দৃষ্টিতেই নিজেকে হ্যায় করলাম! হ্যায় হতে হবে নিজ স্ত্রী ও সন্তানের দৃষ্টিতে। আবার স্মরণ করলাম স্ত্রী ও সন্তানের কথা, যদি লোকটির প্রতিশ্রতি রক্ষা করি তাহলে শুধু আমি নিজেকেই ধ্বংস করবো না, বরং স্ত্রীকে করবো বিধবা আর সন্তানকে করবো এতিম।
এছাড়াও এমন সব পরস্পর বিরোধী চিন্তায় ভেঙ্গে পড়লাম যা আমার মাথায় আঘাত হানছিল। মনে হল যেন আমার বক্ষে এক ভারী বোঝা চাপানো হয়েছে, ফলে আমি শ্বাসরোধে মারা যাবো। অতঃপর দুই হাতের মাঝে মাথা রেখে ভাবতে আরম্ভ করলাম, কি করবো?
একদিকে খলিফার আনুগত্যের হক্ব, চাকুরির আমানত রক্ষার হক্ব এবং সন্তানের পিতৃত্বের হক্ব। অন্যদিকে এই সবকিছুর মোকাবেলায় সেই ব্যক্তির প্রতিশ্রতি পূরণের হক্ব, যে মৃত্যু থেকে আমার জীবন রক্ষা করেছে। অথচ আমার হাতেই এখন তার মৃত্যু নির্ভর করছে। আমিই তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছি।
কিন্তু আমি তো কোন ভীত পুরুষ নহে, না কোন অক্ষম দুর্বল! আমি তো সেই ব্যক্তি যে আল-হামরার যুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল মহা বিপর্যয়ের দিবসে। যেখানে বনের সিংহও টিকে থাকতে পারে না। আমি অবিচল ও অনঢ় ছিলাম এমন স্থানে যেখানে সুদৃঢ় পাথরও স্থির থাকতে পারে না।
আবার কল্পনা করছি, আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে! কারাগারে বন্দি করা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে। ফলে সন্তানের উপর আপতিত হয়েছে লঞ্ছনা, আস্বাদন করছে অভাবের তিক্ততা। আবার ভাবছি;
লোকটিকে যদি মৃত্যুমুখে ঠেলে দেই, তবে তো বিবেকের দংশনে দংশিত হবো। সন্তানদের চোখে হব হ্যায় প্রতিপন্ন। যদি লোকটিকে মৃত্যুর হাতে তোলে দেই তাহলে তারা আমাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে? দীর্ঘদিন পর্যন্ত যার আলোচনা করে এসেছি, বর্ণনা করেছি যার শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ব? বস্তুতঃ সে জীবন তো কোন জীবনই নয়, যদি তাতে না থাকে হৃদয়ের প্রশান্তি, সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ এবং মানুষের সম্মান।
আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ করা
অবশেষে সঠিক উপায়টি খুঁজে পেলাম। স্মরণ হল আমি একজন মুসলিম। আর মুসলমানের দু‘টি কাজের মধ্যে যখন দ্বন্দ দেখা দেয়, তখন উভয়ের মধ্যে যাতে আল্লাহর অধিক সন্তুষ্টি রয়েছে এবং যা হক্বের নিকটতম পন্থা সেটাকেই অগ্রাধিকার দেয়।
আল্লাহ্ জালেম হওয়াকে পছন্দ করেন না এবং জুলুমের সাহায্য করাও পছন্দ করেন না। তাছাড়া খলিফার আদেশ কেবল ন্যায়সঙ্গত বিষয়েই পালন করা অপরিহার্য। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন মাখলূকের আনুগত্য বৈধ নয়। মনে পড়ে গেল ইবনে হুবাইরা ও ইরাকের উদ্দেশ্যে হাসান বসরির সেই জবাবের কথা
ইবনে হুবাইরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়াযিদ ইবনে আব্দুল মালিক আমাকে আল্লাহ্র অবাধ্যতার বিষয়ে কতক বিষয়ে আদেশ প্রদান করে থাকেন। আমি তার বিরোধিতা করতে পারি না। কারণ আমি তার অধিনস্ত কর্মকর্তা। সুতরাং এমতাবস্থায় আমি কি করবো?
উত্তরে হাসান বসরী বললেন, হে ইবনে হুবাইরা শুনে রাখ! যদি তুমি আল্লাহর আদেশ পালন করতে গিয়ে ইয়াযিদের হুকুম অমান্যকারী হও, তবে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তোমাকে ইয়াযিদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। আর যদি তুমি ইয়াযিদের আদেশ পালন করতে গিয়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী হও , তাহলে ইয়াযিদ কিন্তু তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
অনুগ্রহের প্রতিদান
সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ করবো। কামারকে ডেকে পাঠালাম। সিরীয় লোকটির বেড়ী খুলে দিলাম। তাকে গোসলখানায় পাঠালাম। তারপর আমার সহযোগীকে ডেকে বললাম, আমার ঘোড়াটি নিয়ে আস, আমার পক্ষ থেকে আরো তিনটি খচ্চর নিয়ে নাও এবং সাথে দশ হাজার দেরহাম গ্রহণ কর। আর এই লোকটির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র প্রস্তুত কর। সঙ্গে তুমিও বেরিয়ে যাও এবং তাকে তার শহরে পৌঁছিয়ে দাও।
তবে সাবধান! তার মাথার একটি পশমও যদি খসেপড়ে, তোমাকে তার জবাব দিতে হবে। লোকটি বললঃ না আল্লাহর কসম, এটা হতে পারে না। আমি বেচে যাবো আর আপনি এজন্য দায়ী হবেন? না, বরং আমিই আমার পরিনতি ভোগ করি।
সহযোগীকে বললাম, ঠিক আছে তবে তাকে প্রস্তুতকরে অমুক জায়গায় রেখে এসো। আগামীকাল যদি আমি মুক্তি লাভ করি তাহলে তার কাছে যাবো। আর যদি কোন বিপদের সম্মুখিন হই, তাহলে মনে করবে সে যেমন তার জীবনের বিনিময়ে আমাকে রক্ষা করেছিল, তেমনি আমার জীবনের বিনিময়ে তাকে রক্ষা করলাম।
আমিরুল মু‘মিনীনের দরবারে
এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়ে একটু প্রশান্তি লাভ করলাম। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। এরপর ঘুম থেকে জাগ্রত হলাম, অশ্র সজল দৃষ্টিতে সন্তানদেরকে দর্শন করার জন্যে এবং আল্লাহর নামে তাদেরকে বিদায় জানাতে। যখন সেহেরীর সময় হল। ওযু করলাম এবং নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে গেলাম। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং দোয়া করতে থাকি।
অবশেষে যখন দিবসের শুভ্রতা প্রকাশ পেল, আমিরুল মু‘মিনিনের দূত আগমন করল। তাঁর কাছে যাওয়ার অনুরোধ করল, সেমতে তার সাথে চললাম। খলিফাকে দেখতে পেলাম বাড়ির আঙ্গিনায় চেয়ারে বসে আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন। আমাকে যখন একাকি দেখতে পেলেন সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটি কোথায় ?
আমি চুপ থাকলাম, কোন উত্তর দিলাম না। তখন চিৎকার করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় সেই লোকটি? ধ্বংস হও! এবারো আমি নীরব থাকলাম। খলিফা বললেন, আল্লাহর কসম যদি এই কথা বল যে, সে পালিয়ে গেছে, তবে তোমার গর্দান যাবে।
বললামঃ হে আমিরুল মু‘মিনিন ! লোকটি পালিয়ে যায়নি। তবে আমার কিছু কথা শুনুন। রাগান্বিত হয়ে বললেন, বল।
তখন আমি বললামঃ হে আমিরুল মু‘মিনিন ! আপনার মাধ্যমেই আমরা প্রতিশ্রতি পূরণের শিক্ষা লাভ করেছি, আপনার থেকেই আমরা ইনসাফের রীতিনীতি অর্জন করেছি। এই লোকটির অবশ্য একটি বিশেষ ঘটনা রয়েছে, (এই বলে ঘটনা বর্ণনা করলাম) তখন আমি বললামঃ এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। যদি মনে করেন সে জুলুমের শিকার। তাহলে যে ব্যক্তি জুলুম প্রতিহত করেছে সে তো উত্তম কাজটিই করেছে।
আর যদি মনে করেন, সে অপরাধী। তাহলে তার গরদানের পরিবর্তে আমার গরদান হাজির। মৃত্যুর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছে, ফলে আমি বেঁচে আছি। আমিরুল মু‘মিনিনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, বিধায় আমাকে সেনা প্রধান করেছেন। সুতরাং আমি আমার ঋণ পরিশোধ করেছি। সে আমাকে যেভাবে রক্ষা করেছিল, অনুরূপ আমি তাকে রক্ষা করেছি। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আছি। এই আমার কাফন। আমার সন্তান ও পরিবারকে আল্লাহর হেফাজতে রেখে এসেছি এবং মৃত্যুকে সাদরে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।
খলিফা প্রভাবিত হলেন ও অশ্র ঝড়ালেন
আমিরুল মু‘মিনিনের দুই চোখ বেয়ে অশ্র ঝড়ছে। তিনি ছিলেন নরম দিলের মানুষ, বড় সহনশীল। তিনি বললেনঃ আফ্সোস! তুমি কেন তাকে আমার কাছে হাজির করলে না? কেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে আমাকে অবহিত করলে না? তাহলে আমি নিজেই তার অনুগ্রহের উপযুক্ত প্রতিদান দিতাম!
তখন আমি বললামঃ হে আমিরুল মু‘মিনিন ! সে অমুক জায়গায় অপেক্ষা করছে এবং আমার মুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেই স্থান ত্যাগ না করার ওয়াদা করেছে। খলিফা মামুন বললেনঃ এটা তো পূর্বের অপেক্ষা আরো মহান।
লোকটি উপস্থিত হল
প্রহরী এসে বলল, আমিরুল মু‘মিনিন ! গেটে একজন অপরিচিত লোক হাজির হয়েছে। বলছে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী কাজে এসেছে, যা কেবল আমিরুল মু‘মিনিনের কাছেই ব্যাক্ত করতে হবে।
খলিফা বললেনঃ তাকে আসতে দাও। লোকটি ভিতরে ঢুকলো, কি আশ্চর্য! এতো সেই লোক!
খলিফা জিজ্ঞেস করলেনঃ কি ব্যাপার? কি হয়েছে তোমার? লোকটি তখন জবাব দিল, হে আমিরুল মু‘মিনিন ! আমি চলে এসেছি এই জন্য যে, আমার শাস্তি আমার উপরই প্রয়োগ করুন। এবং খুব দ্রত উপস্থিত হয়েছি, যাতে করে আমার অপরাধের কারণে অন্য কেউ শাস্তির সম্মুখিন না হয়।
খলিফা মামুন বললেনঃ আল্লাহর কসম, আমি বুঝতে পারছি না তোমাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? সর্বনাশ! কি হয়েছিল তোমার?
অতঃপর সে তাঁর কাছে দাঙ্গার বৃত্তান্ত বর্ণনা করল, বর্ণনা করল তাকে গ্রেফতার করা ও শাস্তি দেওয়ার ঘটনা। খলিফা মামুন তার কথার মধ্যে বাস্তবতার লক্ষণ অনুভব করেন। তাই তাকে কাছে টেনে নেন, সম্মান করেন এবং সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ান। সেই সাথে তার কাছে শাসন ক্ষমতা পেশ করেন এবং নিজে উক্ত দয়িত্ব হতে অব্যহতি কামনা করেন।
অতঃপর তাকে এক লক্ষ দেরহাম ও দশ হাজার দিনার প্রদানের আদেশ করলেন। এবং দামেস্কের গভর্ণরের প্রতি তার ব্যাপারে এক বিশেষ অছিয়তনামা লিখে পাঠালেন। সেনাপতিকে বললেন, তাকে নিয়ে যাও এবং ইচ্ছামত তাকে উপহার দাও। সম্মানিত কর।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মশীলের আমল বিনষ্ট করেন না
প্রাসাদ থেকে বের হয়ে সেনাপতি তার সহযোগীকে গেটে দেখতে পেলেন। সহযোগী যখন তাঁকে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে তার দিকে অগ্রসর হতে দেখলো, বলল হে আমার মনিব! উধাও হয়ে গেছে, উধাও হয়ে গেছে,আমার সম্মুখেই ছিল।
এরপর ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল লোকটি খলিফার ভবন থেকে হাঁসিমুখে সাচ্ছন্দে বেরিয়ে আসছে। পরিস্থিতি দেখে বোকার মত হা করে রইল এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেনাপতি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি উধাও হয়ে গেছে?
উত্তরে বলল, আমার বিবেক! আমার জ্ঞান-বুদ্ধি উধাও হয়ে গেছে! এই লোকটির ঘটনা থেকে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। গতকাল যাকে ভারী শৃঙ্খলে কবরের দ্বার প্রান্তে বন্দি অবস্থায় দেখতে পেলাম। আজ দেখছি সে রাজ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসছে, সাথে পূর্ণিমার চাঁদ ও অঢেল সম্পদ। সেনাপতি হেসে বললেনঃ এটাই সত্যের পরিণাম এবং অনুগ্রহের ফসল। মহান আল্লাহ্ বলেন (নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎ কর্মশীলের আমল বিনষ্ট করেন না)