ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আপনাকে ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ইসলাম হচ্ছে একটি শান্তিময় ধর্ম (অন্য কোন ধর্মকে এখানে তুচ্ছ করা হয়নি)। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অনেকের অনেক জ্ঞান রয়েছে। আমরা এখানে ইসলামের একটি ছোট আরবি কিতাব এর অনুবাদ করতে চলেছি। যারা ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা এই পেজটি থেকে আরবি অনুবাদ করা ইসলামের ইতিহাসের গল্প সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমরা যে গ্রন্থটি অনুবাদ করতে চলেছি সেই মূল গ্রন্থের আরবি লেখক এর নাম হচ্ছে আলি তান্ত্বাবী। ইতিহাসের গল্প এই গ্রন্থটিতে সর্বমোট সাতটি ইতিহাসের গল্প রয়েছে। তাই অনুবাদক গ্রন্থের নাম দিয়েছেন ইতিহাস গল্প। অনুবাদ করেছেনঃ মাওলানা মোহাম্মদ ছফির উদ্দিন। আমরা এই পেজটিতে ইতিহাসের গল্প অনুবাদ গ্রন্থের প্রথম ইতিহাসের গল্পঃ আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী। এই গল্পটি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল গল্প এখানে প্রকাশিত করা হবে। ইতিহাসের গল্প গুলো পড়ার মাধ্যমে আপনার মাঝে ঈমানের পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি। তাই কথা না বাড়িয়ে আমরা ইতিহাসের গল্পতে চলে যায়। আশা করছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ইতিহাসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কোন কাল্পনিক বিষয় সম্পর্কে বলা হয়নি।
এক নজরে | ইতিহাসের গল্প |
---|---|
গ্রন্থের নাম | ইতিহাসের গল্প |
মোট গল্প | ০৭ টি |
গল্প নাম্বার | এক |
গল্পের নাম | আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী। |
মূল গ্রন্থের লেখক | আলি তান্ত্বাবী (আরবী) |
অনুবাদক | মাওলানা মোহাম্মদ ছফির উদ্দিন |
প্রকাশনায় | www.othobajobs.com |
আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী
দরিদ্র দাতা
বাদশা সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিকের যুগে রাক্কা শহরে (প্রায় বারো শত বছর পূর্বে) বনি আসাদ বংশে খুজাইমা ইবনে বিশর নামে এক ধনাট্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক সম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী। সেই সাথে তিনি ছিলেন একজন দানবীর, মানব দরদী, অনুগ্রহশীল ও বন্ধুদের প্রতি সদাচারী। কোন ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিতেন না, কোন প্রার্থীকে মাহরুম করতেন না, এমন কি কোন সৎকাজ থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে তার সৎকর্মপরায়ণতা এক সময় তাঁর সকল সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়। তার কাছে আর কোন সম্পদই অবশিষ্ট রইল না।
এখন সে বন্ধু-বান্ধবের সাহায্য প্রার্থী, কিছু কাল পর্যন্ত তারা তাকে সাহায্য করে। এরপর তারা বিরক্ত বোধ করতে আরম্ভ করে এবং তাকে আপতিত বিপদ বলে ভাবতে থাকে। অবশেষে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। স্ত্রীকে বললেন তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও। আমি দরজা বন্ধ করে ঘরেই অবস্থান করবো। যতক্ষণ না সচ্ছলতা ফিরে আসে অথবা আমি মৃত্যু বরণ করি।
স্ত্রী বললঃ সচ্ছল অবস্থায় আপনার পাশে থাকবো আর দুরাবস্থায় আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো এটা হতে পারে না। আমি আপনার সঙ্গেই থাকবো। আপনি বেঁচে থাকলে আমি বাঁচবো আর আপনি মারা গেলে আমিও মরে যাবো। তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় আর সঙ্গে থাকা সামান্য খাবারটুকু খেতে থাকে। এক পর্যায়ে তা শেষ হয়ে যায় তখন তারা মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে।
সম্ভ্রান্ত আমির
ইকরামা আল-ফাইয়্যায রাবায়ী ছিলেন সেই উপদ্বীপের গভর্ণর। তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের দরুন তিনি ফাইয়্যাজ (দাতা) নামে ভূঁষিত ছিলেন। একদা তাঁর পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলেন, খুজাইমা ইবনে বিশর কী করে?
তারা উত্তরে বললেনঃ আমাদের মধ্য থেকে কেউ তাকে দেখছি না, হয়তো-বা সফরে আছে।
উপস্থিত একজন বললেনঃ সে অবশ্য শহরেই আছে তবে ধ্বংস হয়ে গেছে! সে ঘরের মধ্যে নিজেকে দাফন করে দিয়েছে তথা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। শপথ করেছে মৃত্যু পর্যন্ত ঘর থেকে বের হবে না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন? এতো সর্বনাশের কথা! অতঃপর তাকে তাঁর পুরো বৃত্তান্ত অবহিত করা হল। তখন তিনি বললেন- সে কি কোন হৃদয়বান বা সহমর্মিতা প্রদর্শনকারীকে পাইনি? সম্পদশালী লোকের সংখ্যা কি কমে গেল? একজন উত্তর দিলেন- না, কমে যায়নি হে আমির! তবে দাতার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
অবশ্য আপনি যদি কোন দিন অভাবে পড়েন, তবে দেখবেন লোকেরা আপনার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনে প্রতিযোগিতা করছে। কারণ, তারা জানে আপনার হাতে সম্পদ আসবে এবং আপনার সমস্যা দূর হয়ে গেলে আপনি তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিবেন। আপনি তাদের সৎকর্মের কথা কখনো ভুলবেন না। কিন্তু যদি দেখে বাস্তবেই আপনি সমস্যায় পড়েছেন এবং হাতে আসার মত সাম্ভাব্য কোন সম্পদ আপনার নেই তাহলে দেখবেন কেউ আপনার দিকে ফিরেও তাকাবেনা।
বন্ধুত্ব তো আজ অনেকের কাছে এক ধরণের ব্যবসা। মানুষ আপনার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে এই আশায় যে আপনার সম্পদ দ্বারা কোনদিন উপকৃত হতে পারবে। অথবা আপনার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে কখনো সাহায্য প্রাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর জন্য ভালবাসা মানুষের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ারই নামান্তর। আমির বললেনঃ ঠিক বলেছ।
অতঃপর তার আলোচনা বন্ধ করে তিনি অন্য বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেন। উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে গেলেন! কারণ তারা ভেবেছিলেন হয়তো তাঁর জন্য কোন উপহার পাঠাবেন অথবা তাঁর কাছে কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করবেন।
অনাহারে তিন দিন
এদিকে খুজাইমা ও তাঁর স্ত্রীর উপর তিনটি দিন অতিবাহিত হল যাতে তাঁরা কিছ্ইু খেতে পাইনি। স্ত্রীর অবস্থা এতটাই সুচনীয়, ক্ষুধার্ত ও ব্যাথিত যে, নিজের ক্ষুধা ও যন্ত্রনা অপেক্ষা অধিকতর কষ্টকর মনে হচ্ছিল। সুতরাং স্ত্রীর মহব্বত ও দরদ তাঁকে ঘর থেকে বের হয়ে ঐ সকল লোকদের কাছে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে যাদের গলায় তাঁর অনুগ্রহের মালা পড়িয়েছিলেন। যাদের কাছে তাঁর ঋণের অর্থ এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু তারা তাঁর কোন ঋণই পরিশোধ করল না। অবশেষে তাঁর ব্যক্তিত্ব বোধ ও আত্ম-মর্যাদা নিজেকে বারণ করল তাদের প্রতি ভিক্ষার হাত বাড়াতে যাদের প্রতি ইতিপূর্বে তিনি দানের হস্ত সম্প্রসারিত করেছিলেন এবং সেই লোকদের থেকে কিছু সওয়াল করতে যারা তাঁর থেকে প্রার্থনা করত। শেষ পর্যন্ত লাঞ্চলা ও অবমাননার সাথে জীবন ধারণের থেকে স-সম্মানে মৃত্যু বরণ করাকেই প্রাধান্য দিলেন।
অজ্ঞাত দানশীল
রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হতে না হতেই দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তৎক্ষণাত স্ত্রীকে বললেন-দেখতো দরজায় কে এসেছে?
স্ত্রী বললঃ সারা শরীর আবৃত এক ঘোড় সওয়ার! শুধু মাত্র তার চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। অতঃপর নিজে এসে দরজা খুললেন। কিন্তু অশ্বারোহী তাকে দেখে অবতরণ করলেন না এমনকি কোন কথাও বললেন না। বরং একটি ভারী থলে তার দিকে ছুড়ে মাড়লেন মনে হচ্ছে সম্পদে ভরপুর। সাথে সাথে তার ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- কে আপনি? আর এগুলো কী? উত্তরে বললেনঃ এগুলো মহান আল্লাহ্ তোমার জন্য পাঠিয়েছেন। এগুলো কারো প্রতি তোমার প্রদত্ত অনুগ্রহের প্রতিদান নহে।
আর আমি যে রাত্রি বেলায় বাড়ি থেকে এই সময়ে একাকি বের হয়ে নিজেই তা বহন করে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তার কারণ হল- আমি চাইনা তুমি আমাকে চিনে ফেল। তখন বললেন, আল্লাহর কসম আপনার পরিচয় না পাওয়া পর্যন্ত আমি ঘোড়ার লাগাম ছাড়বো না। আগন্তুক বললেনঃ “আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী”। তিনি বললেনঃ আরো পরিস্কার করে বলুন। আগন্তুক বললেনঃ না। এ কথা বলে তার হাত থেকে লাগামটি টেনে নিয়ে তৎক্ষণাত ঘোড়া চালিয়ে চলে গেলেন…. রাত্রি তাঁকে ঘিরে ফেলল।
দুঃখের পরে সুখ
খুজাইমা ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রীকে ডেকে বললেন, সুখ এসে গেছে! বাতি জালাও আর এসে দেখ! স্ত্রী বলল, তুমি তো জান ঘরে এক ফুটা তেলও নেই যা দ্বারা বাতি জালাবো…. অতঃপর থলের মথ্যে কি আছে তা তারা অনুভব করতে চেষ্টা করল। বুঝতে পারল এগুলো অর্থ-সম্পদ হবে! আর বলতে আরম্ভ করল, যদি এগুলো টাকা-পয়সা হয়ে থাকে তবে তো অনেক! এদিকে ঘুম তাদের চোখ থেকে উধাও হয়ে গেল। সারা রাত জাগ্রত থেকে সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করে। অবশেষে তা দেখতে পায়। স্বর্ণ মুদ্রা তাদের দৃষ্টি উদ্ভাসিত করে তোলে। আরে এ তো চার হাজার দীনার! এবার তারা পেরেশান হয়ে গেল কে এই লোকটি?
ইকরামা আল-ফাইয়্যায ও দানের স্বাদ
তিনি ছিলেন ইকরামা আল-ফাইয়্যায যিনি হলেন সেই উপদ্বীপের গভর্ণর। যখন তিনি খুজাইমার সংবাদ জানতে পেলেন তখন চার হাজার দীনার একটি থলের মধ্যে ঢুকিয়ে একাকি বের হয়ে যান। যেন কেউ তা টের না পায়। এবং সেই অর্থ খুজাইমাকে দিয়ে আনন্দচিত্তে বাড়ি ফিরলেন। এতে তিনি এতটাই খুশি অনুভব করলেন যেন কেউ তাঁকে চল্লিশ হাজার দীনার উপহার দিল। বরং যদি চল্লিশ হাজার দীনার তাঁকে দেওয়া হতো তবুও এতটা খুশি হতেন না যতটা খুশি হয়েছেন এই চার হাজার দান করে।
আসলে দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরণের স্বাদ রয়েছে তার মধ্যে সর্বাধিক উপভোগ্য এবং অন্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী স্বাদ হলো দান করার স্বাদ। যদি দানশীলের জন্য এই স্বাদ বা আত্মতৃপ্তিকেই দানের প্রতিদান হিসেবে ধার্য করা হয় তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে সেই সম্পদের বিপরিতে যা সে দান করে থাকে। সুতরাং আল্লাহর নিকট তার জন্য যে কয়েকগুণ বিনিময় রয়েছে সেটা কেমন হতে পারে?
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- “যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ ব্যয় করে তার দৃষ্টান্ত ঐ শষ্য দানার মত যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন আরো বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন”। অতঃএব মুসলমানের কি হল যে, সে কেবল এমন ব্যবসা অনুসন্ধান করে যেই ব্যবসায় শতকরা মাত্র পাঁচ বা দশ টাকা লাভ হয়। আর এমন ব্যবসাকে পরিহার করে যার লাভ শতকরা সত্তুর হাজারে পৌঁছে। কখনো কখনো সেটা এক লক্ষ চল্লিশ হাজারে দাড়ায় বা তারও বেশি।
ইকরামার স্ত্রী
এদিকে ইকরামা চুপিসারে গৃহে প্রবেশ করছে আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছে, কারণ কেউ তাঁকে দেখতে পাইনি। তিনি বুঝতে পারেননি যে তাঁর স্ত্রী তাঁকে দেখে ফেলেছে। স্ত্রী ছিল তাঁরই চাচাতো বোন। সে ছিল খুবই দূরদর্শী এবং প্রতিশ্রæতি পূরণকারী। তদুপরি তার মধ্যে সেই রোগ বিদ্যমান ছিল যা সাধারণত অধিকাংশ নারীদের মধ্যে থাকে। যেমন অহেতুক অভিমান, সন্দেহ ও দ্বিধা-সংশয়। সুতরাং দরজায় প্রবেশ করা মাত্রই স্ত্রী অন্ধকারের মধ্যে লাফিয়ে উঠল যেন চোর ধরার জন্য ওঁত পেতে থাকা পুলিশ ! স্ত্রী জিজ্ঞেস করলঃ কোথায় ছিলে? তিনি বললেনঃ বিশেষ একটি কাজে গিয়েছিলাম।
স্ত্রী বললঃ রাজ্যের গভর্ণর রাতের আঁধারে একাকি বের হয়েছে তাও আবার মুখোশ পরা অবস্থায়! না, নিশ্চয়ই না, আল্লাহর কসম তুমি কোন কাজে বের হওনি। বরং আমাকে ছাড়া তোমার আরো কোন স্ত্রী আছে এবং তুমি তার কাছে গিয়েছ। এ বলে কাঁদতে শুরু করে, গায়ের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে, চুল আছড়াতে থাকে আর বিলাপ করতে থাকে এবং চিৎকার করে বলতে থাকে- হে ইকরামা তুমি তোমার চাচাতো বোনের সাথে গাদ্দারী করেছ, তুমি অন্যত্র বিবাহ্ করেছ।
গভর্ণর বললেনঃ কি হলো তোমার? তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? তুমি তো জান আমি কোন নারীর সংস্পর্শ পছন্দ করি না এবং তুমি ছাড়া আমার অন্য কোন স্ত্রী নেই। আমি অবশ্য এমন একটি কাজে বের হয়েছিলাম যে আমি চাই না ব্যাপারটি আল্লাহ্ অন্য কেহ জানুক। স্ত্রী বললঃ আল্লাহর কসম বিষয়টি আমাকে না বলা পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না।
তিনি বললেনঃ না, তোমাকে বলবো না। কিন্তু সে পিড়াপিড়ি করতে থাকে এবং বলে অন্যথায় আমি বাবার বাড়ি চলে যাবো। বললেনঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, তুমি যেহেতু বলতে বাধ্য করলে তাই বলছি তবে আল্লাহর নামে তোমাকে এই ব্যাপারে তোমাকে প্রতিশ্রæতি দিতে হবে যে, বিষয়টি তুমি গোপন রাখবে এবং কাউকে কখনো বলবে না। স্ত্রী বলল, ঠিক আছে তোমাকে ওয়াদা দিলাম।
কিয়ামতের দিন আরশেয় ছায়ায়
গভর্ণর বললেনঃ মনে কর দুপুরের প্রচন্ড রোদে আমরা মরুভূমিতে হাটতে শুরু করলাম আর উত্তপ্ত সূর্র্য্য মাথার খুলি পুরে ফেলার উপক্রম হচ্ছে তখন কিভাবে আমরা ছায়া খুঁজতে থাকবো? হোক না সেটা সামান্য একটু ছায়া। আর যদি একটু ছায়া পেয়েই যাই তবে কিভাবে তাতে বিশ্রাম নিবো? যদিও সেই ছায়া অনেক মূল্য দিয়ে কিনতে হয়।
হে আমার চাচাতো বোন! এবার এমন একটি অবস্থার কথা তোলে ধরছি যেই অবস্থানের সাথে আমাদের মরুভূমির অবস্থানের তোলনা করলে সেটা হবে সূর্য্যরে তাপের সাথে চাঁদের আলোর দৃষ্টান্ত।
সেটা হল হাশরের ময়দান। সেদিন সূর্য্য থাকবে মাথার অতি নিকটে। যেদিনের দৈর্ঘ হবে এক হাজার বছরের সমান। মানুষ নিজেদের ঘামের মধ্যে ডুবতে থাকবে। হে আমার চাচাতো বোন! সেদিন উপস্থিত জনতার মাঝে একজন ঘোষক ঘোষণা করবে যেখানে পূর্ব ও পরবর্তি কালের সকল মানুষ উপস্থিত থাকবে। মহান আল্লাহ্ সকলকে একত্রিত করবেন।
সেদিন সাত শ্রেণির লোককে আহবান করা হবে। আহবান করা হবে শ্রেষ্ঠ সম্মান ও বিশাল নেয়ামতের প্রতি। অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য। যেদিন আরশের ছায়া ব্যাতিত কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে এক শ্রেণির লোক থাকবে তারা যারা গোপনে এমনভাবে দান করে যে ডান হাতে কি দান করলো তা বাম হাত জানে না।
সুতরাং আমি চেয়েছিলাম তাদের অন্তর্ভূক্ত হতে, আর একারণেই চার হাজার দেরহাম নিয়ে একাকি বের হয়েছিলাম…. এভাবে সম্পুর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, এবার আমি কি সত্য বলেছি ? না-কি শপথ করে বলতে হবে আমাকে? স্ত্রী বলল, সত্য বলেছ এবং এতে আমার অন্তর শান্ত হয়েছে।
খলিফার দরবারে খুজাইমা
এদিকে খুজাইমা এই সম্পদ পেয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আমিরুল মু’মিনীন সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালেকের দরবারে (রমলা শহর) উপস্থিত হলেন। তিনি ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু। সাক্ষাত পর্ব শেষ হলে খলিফা তাঁকে সেই উপদ্বিপের গভর্ণরের দায়িত্ব প্রদান করেন এবং তার সপক্ষে একটি পতাকা যুক্ত করে দেন। আর এটা সেই গণতন্ত্র যার জন্য আজ ঢোল-ডাঙ্গর বাজানো হচ্ছে অথচ তাদের মধ্যে এটা এক প্রকার দাবী আর কৃত্রিমতা যা আমাদের মধ্যে অতি স্বাভাবিক এবং সহজাত ব্যাপার। যার ফলে খলিফা সুলাইমান স্বীয় বন্ধুকে স্বাদর সম্ভাষণ জানালেন।
এবং এটা তার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি যে, বিশাল চীন জাপানের শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে কি করে তার সঙ্গে বসবে বা তার সাথে কথা-বার্তা বলবে কিংবা তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিবে? এমনি ভাবে তিনি তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে থাকেন… যখন “আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী” পর্যন্ত পৌঁছলেন।
খলিফা তার পরিচয় জানতে চাইলেন। উত্তরে তিনি বললেন, হে আমিরুল মু‘মিনীন ! আমি যে তাকে চিনতে পারিনি। পরিচয় জানতে না পারায় খলিফা আক্ষেপ করলেন এবং বললেন তাকে খুঁজে বের কর। কে এই মহৎ ব্যক্তি? আমি তার দয়া ও অনুগ্রহের প্রতিদান দেবো।
খুজাইমা উপদ্বীপের আমির
দরিদ্র অবস্থায় গেলেন আর আমির হয়ে ফিরলেন। জনসাধারণের মাঝে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। যখন তিনি রাক্কা শহরের নিকটবর্তী হলেন, লোকেরা তাঁর সংবর্ধণায় অগ্রসর হলো তাদের সাথে ইকরামাও বেড়িয়ে এলেন।
মানুষের চরিত্র
মানুষ চলে যুগের তালে। সময়ের বিবর্তন যদি কাউকে গ্রহণ করে মানুষও তাকে স্বাদরে বরণ করে নেয়। আর যদি সময় কাউকে পিছিয়ে দেয় তবে মানুষও তাকে পিছিয়ে রাখে।
গতকাল তারা যাকে ত্যাগ করেছিল, ক্ষুধার যন্ত্রনায় মৃত্যুর অপেক্ষায় যে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল আজ তাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বরণ করে নিতে তাদের সামান্য লজ্জাবোধ হলো না। বরং এটাকে কোন ব্যাপারই মনে করল না এমনকি ব্যাপারটি নিয়ে একটু চিন্তাও করল না।
অথচ তাঁর সাহায্য তাদের প্রতি এখনও রয়েছে, তাঁর অনুগ্রহ তাদের গর্দান অদ্যবধি ঘীরে রেখেছে। বস্তুত তাঁর দৈন্য-দশায় তারা ছিল বিমুখ কিন্তু দয়া ও অনুগ্রহে তারা থাকতো অতি নিকটে। আর এমনটাই মানুষের অভ্যাস সর্ব যুগে সকল দেশে। নৈকট্য অর্জনে বাদশার ডাকে সাড়া দিতে দ্রুত অগ্রসর আবার ক্ষমতা চ্যুতিতে পরিহার করতেও দ্রুত প্রস্তুত।
দাতা ইকরামা কারাগারে
সে যুগের বিধান ছিল গভর্ণর তার রাজ্যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হলে পরবর্তী গভর্ণরকে আদেশ প্রদান করা হত পূর্ববর্তী গভর্ণরের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব চুকে নিতে এবং রাজ্যের সমস্ত সম্পদ বুঝে নিতে। সে মতে নব নিযুক্ত গভর্ণর খুজাইমা সাবেক গভর্ণর ইকরামা আল-ফাইয়াযকে তার হিসাব প্রদানের জন্য তলব করলেন, এতে অনেক সম্পদ উদ্বৃত রইল। গভর্ণর তাকে সকল সম্পদ প্রত্যাহারের আদেশ দিলেন। কিন্তু ইকরামা তা ফিরিয়ে দিতে ব্যার্থ হন। তখন তাকে বন্দী করার আদেশ দেওয়া হয়। অবশেষে শক্তভাবে বেঁধে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
মহা যন্ত্রণায় তার স্ত্রী
কয়েদ খানার সংকীর্ণতা ও লৌহ দন্ডের বোঝঅ সত্বেও ইকরামা ধৈর্য্য হাড়া হননি। কিন্তু তার স্ত্রী অধৈর্য্য হয়ে পড়েন। কারণ সম্মানী লোক যখন কারা বন্দী তখন শুধু নিজেই এই শাস্তি ভোগ করেন না বরং শাস্তি ভোগ করতে হয় তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও। কারণ সে তো দেয়ালের আড়ালে থেকে যান। কেহ তাকে দেখে না এবং তিনিও কাউকে দেখেন না। পক্ষান্তরে স্ত্রীকে সহ্য করতে হয় দুশমনের উপহাস আর সমব্যথীদের সমবেদনা, যা শত্রæর উল্লাসের তোলনায়ও গুরুতর। ইকরামার স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় ছিল লোকদের সেই কথা যে, নতুন গভর্ণর খুবই ভাল মানুষ সুতরাং তাঁর কাছে উপস্থাপন করার মত কোন উপায় কি আপনার কাছে নেই ? অথবা আপনার স্বামীর এমন কোন বন্ধু নেই যে তাঁর শাস্তি লাঘব করার ব্যাপারে গভর্ণরের সাথে আলোচনা করবে?
অথচ তাঁর স্ত্রীর তো এমন একটি উপায় জানা ছিল যা সকল উপায় অবলম্বনকে ম্লান করে দিতে পারে! আর সেটা হচ্ছে একটি মাত্র কথা যা বললে বললে অনায়াসে স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পারে, উদ্ধার করতে পারে তার স্বামীর যথাযথ মর্যাদা ও স্বধীনতা। আর তা হলো গভর্ণরের কাছে “ আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী ” লোকটির পরিচয় তোলে ধরা।
কিন্তু স্বামী যে তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করতে। শুধু তাই নয় যে আমলটি গোপন রাখার ব্যাপারে আল্লাহর নামে প্রতিশ্রæতি নিয়েছেন তা প্রকাশ করার চেয়ে কারাগারে মৃত্যু বরণ করাই শ্রেয় মনে করলেন। যেন আমলটি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই প্রতিয়মান হয়।
তা ছাড়া সে তো তাঁর স্বমীর সাথে এ ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজেই সে চাচ্ছে না এ ক্ষেত্রে সে ওয়াদা ভঙ্গকারী হোক। যদিও এতে তার মৃত্যু হয়। এভাবেই মর্মান্তিক কষ্টে অতিবাহিত হলো তার দীর্ঘ একটি মাস।
অন্যদিকে সে যুগের জেলখানাও বর্তমান সময়ের মত প্রশস্ত ছিল না বরং তা ছিল কবরের মত একটি গুহা যাতে থাকতো কবরের আদ্রতা, অন্ধকার আরো থাকতো ভারী লৌহ দন্ডের শিকল। অসহায় এ মানুষটি মোমের মত গলে যেতে শুরু করলো, শরীরের মাংস শুকিয়ে হাড় বেড়িয়ে এসেছে। তার অন্তরে এ গোপন বিষয়টি এতটাই বোঁঝা অনুভব হলো যেন তা একটি সীসাখন্ড আর তার হৃদয়টি হলো রেশমের এক পাতলা কাপড় যে তার ভারে ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ঠিক তেমনটিই অনুভব করছে তাঁর স্ত্রী যেন হৃদয়টা ফেটে চৌচিড় হয়ে যাচ্ছে। একদিকে স্বামীর ভালবাসা ও দুঃখ-দুর্দশা অন্যদিকে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা এবং প্রতিশ্রæতি রক্ষা করা, যেন যাতা কলের দুটি পাথর।
আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী
অবশেষে তাঁর স্ত্রী একটি কৌশল অবলম্বন করল। সে তার বুদ্ধিমতি সাহসী ও সু-শ্রী এক দাসীকে ডেকে গভর্ণরের কাছে পাঠালো। যা বলার তা শিখিয়ে দিল। দাসী রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করল। গভর্ণরের সাথে সাক্ষাত করতে চাইল। বলল, গভর্ণরের প্রতি আমার এক বিশেষ উপদেশ রয়েছে যা কেবল তাঁকেই বলতে হবে। অতঃপর তারা তাকে গভর্ণরের কাছে নিয়ে গেল। গভর্ণর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তুমি? এবং কি কারণে এসেছ?
উত্তরে দাসী বলল, একান্তই একাকি বলতে হবে। সকলেই চলে গেল এবার সে বলছে আপনি কি চান? “আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী” লোকটির সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দেব? তৎক্ষণাত গভর্ণর লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, আরে সর্বনাশ! কি বলছ? তুমি কি তাকে চেন? চতুর দাসী বলল, যদি আমি তার পরিচয় করিয়ে দিই এবং সেও আপনার সাহায্য প্রার্থী! তাহলে আপনি তার জন্য কি করবেন? গভর্ণর বললেন, তুমি জিজ্ঞেস করছ; আমি তার জন্য কি করবো?
তুমি তার সংবাদ দাও তারপর দেখবে আমি তার জন্য কি করি! বল দ্রæত বল আমার ধৈর্য্যের বাঁধন ছিঁড়ে যাচ্ছে! কে সেই মহান ব্যক্তি? এবার দাসী বলল, তিনি হলেন ইকরামা আল-ফাইয়্যায। একথা শুনে তিনি বিস্মিত হলেন! চিৎকার দিয়ে বললেন, হায় আফসোস! সর্বনাস!! তুমি কি নিশ্চিত সেই লোকটি ইকরামা? দাসী বলল, হ্যাঁ নিঃসন্দেহে তিনিই ইকরামা।
গভর্ণর জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু তুমি কি করে জানলে? দাসী এবার সব খুলে বলল। একথা শুনে আক্ষেপে গভর্ণর নিজেই নিজের মুখে আঘাত করতে থাকেন, মাথার চুল আছঁড়াতে থাকেন আর বলতে থাকেন, হায় আফসোস ! হায় আফসোস!! ইকরামা ও তার স্ত্রীর জন্য!!! সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ায় আরোহণ করলেন এবং রাজ্যের গণ্যমান্য পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বললেন, আমাকে কারাগারে নিয়ে চল।
সৎকর্মের প্রতিদান
কারাগারে গিয়ে ইকরামার পাশে উপস্থিত হলেন। তাঁর মাথায় চুম্বন করলেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। ইকরামা ভাবলেন, নিশ্চয়ই তাঁর স্ত্রী এই রহস্য ফাঁস করে দিয়েছে! এতে তিনি লজ্জিত হলেন এবং মস্তক অবনত করলেন। গভর্ণর তাঁর শৃঙ্খল খুলে দেওয়ার আদেশ করলেন, সাথে সাথে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হল। এবার গভর্ণর নিজ পা অগ্রসর করে দিয়ে বললেন, আমার পায়ে বেড়ী পরাও।
ইকরামা বললেন, এ কী করছেন আপনি? বললেন, তোমার সাথে যেমনটি করেছিলাম নিজের সাথে তাই করছি, যেন নিজের অপরাধের শাস্তি হয়ে যায়। ইকরামা বললেন, এমনটি করবেন না। এবার গভর্ণর যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে ইকরামা গভর্ণকে বিদায় জানিয়ে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলেন কিন্তু গভর্ণর বললেন, না এটা হতে পারে না। সরাসরি প্রশাসনিক ভবনে চলুন। ইকরামাকে গোসলখানায় নিয়ে স্বয়ং নিজেই তাঁকে গোসল করালেন, নিজের পোষাক তাঁকে পরিধান করালেন এবং সঙ্গে নিয়ে আমিরুল মু‘মিনীন সুলাইমানের দরবারে উপস্থিত হলেন।
খলিফার নিকট প্রত্যাবর্তন
বাদশা সুলাইমান যখন শুনতে পেলেন খুজাইমা পূনরায় ফিরে এসেছেন, ভাবলেন গভর্ণর এত দ্রæত ফিরে এলেন ! সেটাও আবার কোন নির্দেশ ছাড়াই এবং কোন সংবাদ না দিয়েই। সঙ্গে আবার ইকরামাও এসেছে!
নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছেন। সুতরাং সালাম দেওয়ার পূর্বেই জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্যে এসেছেন? গভর্ণর বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! “আমি সম্মানীদের ক্ষত নিরাময়কারী” ব্যক্তির সন্ধানে আমি সফল হয়েছি এবং তাঁকে সঙ্গে নিয়েই উপস্থিত হয়েছি। কারণ আপনি তার জন্য আক্ষেপ করেছিলেন এবং তাঁকে দেখার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, ইকরামা +আল-ফাইয়্যায।
খলিফা তাকে ডেকে তাঁর পাশে বসালেন এবং বললেন, হে ইকরামা! তোমার খ্যাতিই তোমার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যা হোক এই কাগজটি হাতে নাও এবং তোমার যাবতীয় চাহিদা উল্লেখ কর। বললেন, তবে কি আমাকে অব্যহতি দিবেন?
হে আমিরুল মু’মিনীন! আমার কোন চাহিদাই নেই। চাহিদা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা অতঃপর আপনার। বললেন, না এটা তোমাকে অবশ্য পূরণ করতে হবে। এরপর তিনি তার চাহিদা সমুহ উল্লেখ করলেন এবং খলিফা তা প্রদান করার আদেশ করলেন।
অবশেষে আজারবাইজান, আরমিনা ও আল-জাযিরা তিনটি প্রদেশকে একত্রিত করে এর শাসনভার তাঁর হাতে অর্পণ করেন। আর বললেন, খুজাইমার বিষয়টি তোমার হাতে, ইচ্ছে করলে তাঁকে বরখাস্ত করতে পার, চাইলে তোমার অধীনে তাকে স্ব-পদে বহাল রাখতে পার। ইকরামা বললেন, বরং তিনি তার পদেই বহাল থাকুক। অতঃপর খলিফা সুলাইমানের মৃত্যু পর্যন্ত উভয়েই নিজ নিজ পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।